ইন্টারনেট স্পীড VS ব্যান্ডউইথ:
ইন্টারনেটের পারফরম্যান্স আলোচনায় প্রায়ই "স্পীড" আর "ব্যান্ডউইথ" শব্দ দুটি ঘুরেফিরে আসে। যদিও অনেকেই শব্দ দুটিকে একই মনে করেন, আসলে দুটি বিষয় আলাদা! দুটোই ইন্টারনেট কানেকশনের কার্যকারিতার একই রকম সূচক, কিন্ত টেকনিক্যালি এদের মধ্যে পার্থক্য আছে। এই ব্লগে আমরা ইন্টারনেট স্পীড ও ব্যান্ডউইথের মূল পার্থক্য বুঝবো, পাশাপাশি জানবো এগুলো আপনার অনলাইন এক্টিভিটিকে কীভাবে প্রভাবিত করে।
ব্যান্ডউইথ আর স্পীডের পার্থক্য
-
ব্যান্ডউইথ: ব্যান্ডউইথ হচ্ছে একটি নেটওয়ার্ক কানেকশনের সর্বোচ্চ ডেটা বহনের ক্ষমতা। যেমন— একটি পানির পাইপের প্রস্থ যত বেশি হবে, একসাথে তত বেশি পানি প্রবাহিত হয়।
-
স্পীড: অন্যদিকে স্পিড হচ্ছে ডেটা স্থানান্তরের গতি। অর্থাৎ, পাইপ দিয়ে পানি কত দ্রুত বের হচ্ছে।
উদাহরণ: খুলনা বিশ্বরোডকে ইন্টারনেট হাইওয়ে ভাবুন।
-
ব্যান্ডউইথ = রাস্তার লেনের সংখ্যা। যত বেশি লেন, তত বেশি গাড়ি একসাথে চলতে পারে।
-
স্পীড = গাড়ির গতি। লেন কম হলেও গাড়ি দ্রুত গেলে যানজট কমবে।
ব্যান্ডউইথ কী?
ব্যান্ডউইথ হলো কোনো নেটওয়ার্ক কানেকশনের সর্বোচ্চ ডেটা বহনের ক্ষমতা, যা সাধারণত এমবিপিএস (Mbps) বা জিবিপিএস (Gbps) হয়ে থাকে। যেমন: ১০০ Mbps ব্যান্ডউইথ মানে প্রতি সেকেন্ডে ১০০ মেগাবিট ডেটা ট্রান্সফার সম্ভব।
ইন্টারনেট স্পীড কী?
এটি হচ্ছে আপনার ডিভাইসে ডেটা ডাউনলোড বা আপলোডের গতি। উদাহরণস্বরূপ, ৫০ Mbps স্পীড মানে প্রতি সেকেন্ডে ৫০ মেগাবিট ডেটা লোড হবে।
স্পীড ও ব্যান্ডউইথ মাপার উপায়ঃ
স্পীড টেস্ট:
-
ওকলা স্পীডটেস্ট ডট নেট, ফাস্ট ডট কম বা গুগল স্পীড টেস্ট ওয়েবসাইট ব্যবহার করুন।
-
রিয়েল টাইম আপলোড/ডাউনলোড: যেমন—আপনার ইন্টারনেট এর সাথে কানেক্টেড ডিভাইস থেকে কোনো বড় ফাইল আপলোড ডাউনলোড করে স্পীড চেক করুন!
ব্যান্ডউইথ চেক:
-
ইন্টারনেট প্যাকেজ প্ল্যান দেখুন: ISP এর দেওয়া প্যাকেজ ডিটেইলসে ব্যান্ডউইথ উল্লেখ থাকে। ISP ওয়েবসাইট দেখুন।
-
রাউটার সেটিংস: রাউটারের অ্যাডমিন প্যানেলে লগ ইন করে কানেকশনের ডিটেইলস দেখুন।
ব্যান্ডউইথ কীভাবে কাজ করে?
ব্যান্ডউইথ সম্পর্কে জানার পর আপনার মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে, 'ব্যান্ডউইথ আসলে কীভাবে কাজ করে?' সহজভাবে বললে, ব্যান্ডউইথ হলো একটি নেটওয়ার্ক কানেকশনের সর্বোচ্চ ডেটা ট্রান্সফার রেট নির্ধারণ করা। এটি মূলত সেই কানেকশনের ধারণক্ষমতা, যা ঠিক করে দেয় একটি নির্দিষ্ট সময়ে কতটুকু ডেটা আদান-প্রদান করা যাবে। এবার জেনে নিই ব্যান্ডউইথের কার্যপদ্ধতি!
১। ক্যাপাসিটি:
ডেটা স্থানান্তর ক্ষমতা। ব্যান্ডউইথের স্থানান্তর ক্ষমতা মেগাবিট পার সেকেন্ড (এমবিপিএস)-এ মাপা হয়, যা প্রতি সেকেন্ডে সর্বোচ্চ কত ডেটা ট্রান্সফার করা যায় তা নির্দেশ করে। উদাহরণস্বরূপ, ১০০ এমবিপিএস ব্যান্ডউইথ মানে এই কানেকশন দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ১০০ মিলিয়ন বিট ডেটা পাঠানো সম্ভব।
২। ডেটা স্থানান্তর:
যখন অনলাইনে কোনো ডেটা একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে স্থানান্তর হয়, তখন এটিকে ছোট-ছোট খন্ডে বিভাজন করা হয়। যেটিকে প্যাকেট বলা হয়। আর ব্যান্ডউইডথ তখন সিদ্ধান্ত নেয় যে, একই সময়ে কতগুলা প্যাকেট রিসিভ অথবা সেন্ড হবে। যতবেশী ব্যান্ডউইডথ তত বেশি প্যাকেট একই সময়ে রিসিভ অথবা সেন্ড হয়। যেটি ডেটা স্থানান্তর গতি বাড়িয়ে দেয়।
৩। গতি:
ফাইল ডাউনলোড, ভিডিও স্ট্রিমিং বা ওয়েবপেজ লোড করার গতি ব্যান্ডউইথের উপর নির্ভর করে। ব্যান্ডউইথ যত বেশি হবে, ডেটা ট্রান্সফার তত দ্রুত হবে। এর ফলে অনলাইনে রেস্পন্স ত্বরান্বিত হবে এবং আপনার অভিজ্ঞতাও হবে দূরান্ত!
৪। শেয়ার্ড রিসোর্স:
ইন্টারনেটের মতো নেটওয়ার্কে ব্যান্ডউইথ অনেক ইউজার ও ডিভাইস ভাগাভাগি করে ব্যবহার করে। যখন একই ব্যান্ডউইথ একসাথে অনেক ডিভাইস ব্যবহার করে, তখন নেটওয়ার্কে কনজেশন (জট) তৈরি হয়। এর মানে হলো, সবার ইন্টারনেটের গতি কমে যাবে!
মূল কথা:
ব্যান্ডউইথ হলো "কত ডেটা" আর স্পিড হলো "কত দ্রুত"। সুতরাং গেমিং বা 4K স্ট্রিমিংয়ে হাই ব্যান্ডউইথ চাই ই চাই, কিন্তু শুধু মেইল চেক বা টুকটাক ব্রাউজ করলে লো-স্পিড প্যাকেজেই চলে! পরিশেষে আপনি আপনার ইন্টারনেট ব্যবহার অভ্যাস বুঝে প্যাকেজ নির্বাচন করুন, মাসিক বিল বাঁচান। স্বাছন্দে উপভোগ করুন ইন্টারনেট সর্বোচ্ছ সেবা।